মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০১৩

Poems by Chechen Poet Apti Bisultanov


জীবন ও স্বাধীনতা রক্ষার যুদ্ধে অবতীর্ণ চেচন কবি আপ্তি বিসুলতানভের কবিতা


অনুবাদ-গাজী সাইফুল ইসলাম

কবি আপ্তি বিসুলতানভ


চেননিয়ার উরাস পর্বতের পাদদেশের একটি গ্রাম, নাম গুইতসুওখানেই ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন প্রখ্যাত চেচেন যোদ্ধা ও কবি আপ্তি বিসুলতানভ (Apti Bisultanov)| অপরাপর সাধারণ সব চেচনিয়ান শিশুর মতোই কবি আপ্তি বেড়ে উঠেন সরকারিভাবে নিষিদ্ধ ঐতিহ্যবাহী চেচেন ভাষায় কথা বলেঅল্প বয়সেই কবিকে দেখতে হয় পিতার মৃত্যুতাঁর পিতা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধ করে আহত হয়ে ঘরে ফিরেছিলেনআমরা কবির 'চাইল্ডহুড' কবিতায় এ বিষয়ের অবতারণা দেখতে পাই:
''আমার পিতা দু'বার দেখেছেন তার শৈশব
প্রথম যখন তিনি যুদ্ধে গেলেন-পরিবহন গাড়ির
জানালা দিয়ে তাকে দেখেছিলেন-স্টেশনের প্ল্যাটফরমে
চুপি চুপি সে এসেছিল তার পার্বত্য গ্রাম থেকে-তাঁকে বিদায় জানাতে
দ্বিতীয়বার রাশান সৈনিকরা যখন তাকে নির্বাসনে নিয়ে যাচ্ছিল
ঘুরে দাঁড়িয়ে পেছনে ফিরে তিনি তাকে দেখেছিলেন
গ্রামের শেষ প্রান্তে-ভয়ের কারণে
আরেক পা সামনে এগোতে সাহস করছিল না সে''
অল্প বয়সেই তিনি লিখতে শুরু করেনসতেরো বছর বয়সে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম কবিতা১৯৭৭ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত আপ্তি গ্রজনির ইনগুশিয়ান স্টেট ইউনির্ভাসিটির দর্শন বিভাগে পড়াশোনা করেনএরপর কিছুদিন শিক্ষকতার পেশায় নিয়োজিত থাকেনওই সময় তিনি দেশের বিভিন্ন সাহিত্য সাময়িকীতে লিখতে থাকেন।  ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম কাব্য সংকলন 'লাঙল-আগুন-বাড়ি' (Nokh-tse–tcho trans: plough-fire-house)| এরপর ১৯৮৮ সালে প্রকাশিত হয় 'গান' (Zkha Illy trans: The song)| একই বছর আপ্তি গ্রজনির 'চেচেন বুকস পাবলিশার্স'-এ যোগ দেন সম্পাদক হিসেবে১৯৯১ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ 'আলোর ছায়া' বা 'বাজ ছায়া' (Tkesan Indare trans: Shadows of lightning)| স্ট্যালিনের সময় রাজনৈতিক নিপীড়নে যেসব চেচেনের মৃত্যু হয়েছিল তাঁদের উদ্দেশ্যে গ্রন্থটি উৎসর্গ করেছিলেন তিনি
কবি আপ্তি ঐতিহ্যবাহী চেচেন ঘরানার লেখা দিয়ে সাহিত্যিক জীবন শুরু করলেও ফ্রি ভার্সেই (মুক্ত কাব্যে) বেশি উৎসাহীতাঁর কাব্যিক ভাষা সমপ্রসারিত হয়েছে wm¤^wjK দার্শনিক চিন্তার সম্মিলনেএ বিষয়টা চেচেন ভাষা গ্রহণ ও সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেতিনি কবিতায় মিথের ইঙ্গিতময় ব্যবহারের চেয়ে বিস্তৃত ব্যবহারই বেশি করেনকবিতা ও ধর্ম সম্পর্কে তাঁর মত হলো ''ধর্ম থেকে কবিতাকে পৃথক করা অসম্ভব'' একবার  ২০০৪ সালে তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ''আমি সবসময় বলি, আমরা, চেচেনরা, চেচনিয়ার জন্য কারো সমর্থন চাই নাআমরা সমর্থন চাই সত্যের পক্ষে এবং এই পৃথিবীতে আমি অন্তত রয়েছি সত্যের পক্ষেআমি জানি, জার্মানি ও বর্তমানের পৃথিবী এবং এর শব্দাবলির পক্ষে আমি সেকেলেকিন্তু এ কথাও মানতে হবে যে, যা কিছু মূল্যবোধের সঙ্গে জড়িত সে সবের প্রতি বিরক্ত হয়ে পড়লে আমি নিজেকে হারিয়ে ফেলব'' কবির এমন বক্তব্যের স্পষ্ট প্রমাণ মেলে তাঁর কবিতায়চেনেন ভাষার প্রতি তাঁর যে দরদ, ভালোবাসা তাঁর কবিতার রন্ধে রন্ধে গাঁথাযে কোনো মূল্যে তিনি তাঁর মাতৃভাষা 'ইনগুশ'কে রক্ষা করতে চানবহু বছর ধরে রুশ সরকারের চাপিয়ে দেয়া রাশান ভাষার কারণে কোণঠাসা হতে হতে যা এখন হারিয়ে যেতে বসেছে। 
বিষয়গতভাবে কবি আপ্তির কাজ তাঁর হারিয়ে যাওয়া সংস্কৃতির শিকড় খুঁজে ফেরা-যে সংস্কৃতির গভীর সংশ্রব রয়েছে তাঁর ধর্ম ইসলামের সঙ্গে কবি আপ্তি কাদিরি সমপ্রদায়ের সুফি বিধানের অনুসারীশুরু থেকেই তিনি দেশের ¯^vaxbZv আন্দোলনে তাঁর সমর্থন দিয়ে আসছেনরাশিয়ার বিরুদ্ধে চেচেনদের সর্বাত্মক দু'টি ¯^vaxbZv যুদ্ধের প্রথমটিতে কবি সশস্ত্র অংশগ্রহণ না করলেও দ্বিতটিতে অংশ গ্রহণ করেছেনপ্রথমটিতে কবিতা ও গানের মাধ্যমে এবং কথক হিসেবে যুদ্ধের সমর্থনে চেচেনদের সঙ্গে যুক্ত থাকেন তিনিতাঁর কবিতা ও গানে এসবের প্রমাণ মেলে
 ১৯৯৯ সালে দ্বিতীয় চেচেন যুদ্ধের সময় কপর্দকশূন্য অবস্থায় এই কবি পালিয়ে যান জার্মানিতেদেশ ত্যাগের পর ২০০২ সালের মে মাসে প্রথম যে কবিতাটি তিনি লিখেন সেটি আমরা পেয়েছি-'চেচনিয়া ত্যাগের পর প্রথম কবিতা' শিরোনামে
''তোমার উভয় হাতে আঁকড়ে ধরো
ওই পুরনো সজারুর হৃৎপিণ্ড
এরপর শক্ত করে সেলাই করে দাও তার প্রতিটি ক্ষত
যেমন একজন মুচি তার শক্ত সুঁচে সেলাই করে পুরনো জুতো,
এরপর হুলিয়া মাথায় নিয়ে পালাও কম্পাসের বিন্দু থেকে বিন্দু
কিন্তু সাবধান, মুখ খোলো না
একেবারে মৃত্যু পর্যন্ত''
চেচনিয়ায় বিসুলতানভকে বলা হয়,''চেচনিয়ার পিতার সন্তান''নিজ এলাকার সমসমায়িক কবিসাহিত্যিক, যারা জন্মগ্রহণ করেছিলেন ১৯৪৪ থেকে ১৯৫৬-এর মধ্যে তাঁদের সঙ্গে বেশিদিন থাকেননি কবিজীবন বাঁচনোর জন্যই পালিয়ে বেড়িয়েছেন নানান দেশেকখনো আশ্রয় নিয়েছেন কাজাকিস্তানে কখনো সাইবেরিয়ায়বিদেশে অনিশ্চিতার মধ্যে থেকেও দেশকে পরাধীনতার গ্লানি মুক্ত করার কথা সবসময় ভেবেছেন তিনি এবং লিখেছেন কবিতাভিনদেশে তাঁর মুখের ভাষা রাশান হলেও তাঁর সাহিত্যের ভাষা বরাবরই চেচেন
আন্তর্জাতিক লেখক সংঘ 'পিইন'-এর সম্মানীত সদস্য কবি আপ্তি তাঁর প্রজন্মের কবি-লেখকদের মধ্যে দেশে-বিদেশে সবচেয়ে বেশি খ্যাতিমান১৯৯২ সালে 'বাজ ছায়া' কাব্যগ্রন্থের জন্য লাভ করেন ''চেচেন পিপুলস প্রাইজ ফর লিটারেচার'' 
রাশান, টার্কি ও ফিনিস ছাড়াও বেশ কিছু ভাষায় তাঁর কবিতা অনূদিত হয়েছে২০০২ সাল থেকে বসবাস করছেন জার্মানির বার্লিনে২০০৩ লাভ করেন নেদারল্যান্ডের 'পোয়েটস অব অল ন্যাশনস' ওয়ার্ড
কবিতা সম্পর্কে কথা বলতে গেলেই তাঁর মুখ আলোকিত হয়ে ওঠেতিনি বলেন: ''আপনি যদি সত্যিই আমার মতামতে আস্থা রাখেন তাহলে বলব, পরিস্থিতিই আমাকে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত করেছে।  তিনি বলেন, আশা রাখি, জীবনের কোনো একদিন হলেও শিল্পের সাধনায় সম্পূর্ণ মনোনিবেশ করতে পারব'' তিনি উল্লেখ করেন, ''বর্তমানে চেচনিয়াতে শুধু ছোট ছোট কবিতা পঠিত হয়ে থাকেমানুষের প্রাত্যাহিক জীবনে এত সমস্যা যে তারা কবিতার সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারে নালোকেরা বলে আউসৎভিৎচের ( কুখ্যাত শ্রম শিবির) পর মানুষ কবিতা লিখতে ভুলে গেছেএকই বাস্তবতায় এখনো রয়েছে চেচেনরাযুদ্ধ বাঁধবার আগে সেখানে ১০ লাখ চেচেন জীবিত ছিল-তাদের থেকে ২ লাখ চেচেন নিহত হয়েছেএরপরও চেচনিয়ায় পশ্চিমের চেয়ে অনেক বেশি কবিতা রচিত হয়এখানে কোনো মিথ্যে নেই, প্রপাগান্ডা নেইসবকথা সঠিক, বিচার উত্তীর্ণ''
কবি আপ্তির কবিতায় পার্বত্য গ্রাম খাইবাখের (Khaibakh or Chaibach) সেই ৮০০০ বাসিন্দার গল্প বলা হয়েছে-১৯৪৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি প্রচণ্ড তুষার ঝড়ের সময় যাদের পালানোর উপায় ছিল না, তাড়িয়ে নিয়ে গবাদি পশুর আস্তাবলে আবদ্ধ করে জীবন্ত জ্বালিয়ে দিয়েছিল রেড আর্মির লোকেরা, যাদের অধিকাংশ ছিল শিশু আর নারীআর সেখান থেকে যারা পালানোর চেষ্টা করছিল-তাদেরও গুলি করে হত্যা করেছিল তারা
 কবি আপ্তির মতে, এই একবিংশ শতাব্দী পর্যন্ত চেচনিয়ার প্রতি বিদ্বেষভাজন রাশিয়া বহু রাজনৈতিক মিথ্যের সঙ্গে জড়িয়ে রেখেছে সেখানকার মুসলমানদের নাম

আপ্তি বিসুলতানভের কবিতা

শৈশব

আমার দাদী প্রায়শই বলতেন
তুমি যদি তোমার শৈশব তিনবার দেখতে পাও
তাহলে দীর্ঘজীবি হবে।  
আমার বাবা দু'বার দেখেছেন তাঁর শৈশব
প্রথম যখন যুদ্ধে গেলেন-পরিবহন গাড়ির
জানালা দিয়ে তাকে দেখেছিলেন-স্টেশনের প্লেটফরমে
চুপি চুপি সে এসেছিল তার পার্বত্যগ্রাম থেকে-তাঁকে বিদায় জানাতে
দ্বিতীয়বার রাশান সৈনিকরা যখন তাকে নির্বাসনে নিয়ে যাচ্ছিল
ঘুরে দাঁড়িয়ে পেছনে ফিরে তিনি তাকে দেখেছিলেন
গ্রামের শেষ প্রান্তে-ভয়ের কারণে
আরেক পা সামনে এগোতে সাহস করেনি সে''
এরপর সে আত্মগোপন করল
রাতের অন্ধকারে
একটি পুরোনো প্রতিরক্ষা ইমারতে বুনো ঘুঘুদের সঙ্গে
কিন্তু 'এনকেভিডি'র সৈনিকেরা উড়িয়ে দিলো সেটি
আর তাতেই মৃত্যু হলো তাঁর

তৃতীয়বার নির্বাসন থেকে ফেরার পর
যখন পাহাড়ী গ্রামে থাকতে দেয়া হলো না তাঁদের পরিবারটিকে
আমার বাবা তখন এক সমতলে তাঁদের রেখে
খুঁজতে গেলেন জন্মস্থানের অস্তিত্ব
ফেরার পথে অনেকটা দূর পর্যন্ত এসেও কোথাও
তিনি পেছনে দেখতে পেলেন না তার শৈশবকে
তখনই তিনি বুঝে নিয়েছিলেন-একজনের খুব বেশি দিন ধরে
বেঁচে থাকতে চাইতে নেই
ছোট ছিলাম বলে বুঝতে পারিনি তাঁর সব কথা
কিন্তু এখন মনে করি-সব বুঝতে পারি
অল্প বয়সে কেন তিনি মারা গিয়েছিলেন
বি.দ্র.
আমি মাত্র একবার দেখেছি আমার শৈশবকে
যখন আমি যুদ্ধে গিয়েছিলাম
তোরণে সে দাঁড়িয়েছিল-সাহস পাচ্ছিল না
আমার সঙ্গে আরেক পা সামনে এগোতে
বোমার আঘাতে ঝাঁঝড়া হয়ে গিয়েছিল রাস্তার বুক
এরপর
ভীত সন্ত্রস্ত শিশুদের সঙ্গে সেও আশ্রয় নিলো
একটি বাড়িতে
কিন্তু উন্মত্ত এক বৈমানিক বোমা ফেলল বাড়িটির ওপর
আমার সন্তান কখনোই দেখেনি তার শৈশব
শিশু থাকতেই সে যুদ্ধে গিয়েছিল

বাংলানুবাদকের নোট: আপ্তি বিসুলতানভের এ কবিতাটিতে দু'জায়গায় Gb‡KwfwW( NKVD) (P. S.) সংকিপ্ত শব্দ ব্যবহার করেছেন
NKVD-Narodny Kommissariat Vnutrennikh Del (People's Commissariat of Internal Affairs).
P. S. post-scriptum / plus shit/ It means something added after a letter or other.

 
 চেচেন মহিলারা প্রার্থনা করছেন
একটি ¸Yvwš^Z রাত

উজ্জ্বলতা এত বেশি যে,
কুকুরটি বুকছে নিজেরই ছায়া দেখে
যে দেখতে পায় ঘুমন্ত ঘাসের শ্বাস-প্রশাসের ওঠানামা
তার দৃষ্টি তীক্ষ্ণ বড়

নিবৃত্ত থাকো উল্কা বৃষ্টি দেখা থেকে
নিবৃত্ত থাকো কবিতা থেকে
সৌন্দর্যের অবলোকন থেকে
মৃত্যু হোক তোমার-

এই ¸Yvwš^Z রাতের প্রার্থনা
একটি পর্বতশ্রেণি ক্রমবর্ধ্বমান হউক
আমার হৃদয়ে

কর্কশ বাজপাখি

কর্কশ বাজপাখি, কতটা পছন্দ করো তুমি আমাকে?
তোমার উদ্দেশ্যহীন চিৎকার
ঈশ্বরের কানে পৌঁছে না,
শুধুই বাতাসে পাখনা মেলো
আর ¯^cœ দেখো ¯^vaxbZvi|
এসো আমরা নিরব থাকি
আমি থাকব এ পৃথিবীতে
আর তুমি থাকবে সুর্যাস্তের ফিনিকে...

একটি তৃতীয় ঘড়ি

আমাদের বাড়িতে দু'টি ঘড়ি আছে
একটি মায়ের ঘরে তাঁর প্রার্থনার জন্য
আরেকটি আমার ভ্রমণসময় দেখার জন্য
কিন্তু আরও একটি ঘড়ি প্রয়োজন আমাদের বাড়িতে
আমাদের নিরবতার সময় নির্দিষ্ট করার জন্য

যুদ্ধের বাস্তবতায়

যুদ্ধের বাস্তবতায় অভ্যস্ত হওয়া কঠিন
এর বর্বরতা সবকিছুকে হার মানায়...
ছিন্নভিন্ন্‌ করে শরীর
ক্ষতবিক্ষত করে হৃদয়
কিন্তু এর মধ্যে কোন ভাবনাটি আপনাকে
মরিয়া করে তোলে
প্রিয় মানুষের সঙ্গ কামনা
নাকি বুলেটের?
ভেবে বলুন আরেকবার দম নিয়ে আল্লাহর নামে

স্মৃতি

এবং পর্বতের পতনের পরও টিকে থাকে পাথর
এবং পৃথিবীর হিংস্র মানুষ
এবং ডিগবাজি খাওয়া পাথরের ছায়া
এবং ¯^‡M©i হিংস্র কবরসমূহ
এবং শহীদগণের মুখ
এবং চেচেনদের রক্ত ¯^M©-g‡Z©¨i সর্বত্র
এবং পৃথিবীর প্রান্তে মুক্ত বিড়ালছানা
এবং ব্যাঙের অশ্রুতে প্লাবন বহা সাগর
এবং কচ্ছপ অবমুক্ত করা আকাশ
এবং প্রজাপতির আঘাতে বিচূর্ণ হওয়া জানালা
এবং এই সন্ধ্যায় বার্লিনে আমি
কাউন্সিল অব ক্রিডিটেশন
সো মাজিং স্মৃতিসমূহ
এবং পিঁপড়েরা হাঁটে আমার শরীর ও আত্মা জুড়ে
এবং এরপরও প্রার্থনা, এভাবেই যেন শেষ হয় সবকিছু:
আমার আল্লাহ, পাই যেন চেননিয়ায় শেষ নিঃশ্বাস টানার সুযোগ

খাইবাক

কোথায় পা, কোথায় মাথা ঠাহর করা কঠিন
বিষাক্ত ঠোকরে ক্ষতবিক্ষত অভাগা হৃৎপিণ্ড
ধারালো থাবার সঙ্গে উঠ আসছে বিপন্নের চিৎকার-
এরপরও আমি গাইছি:
ধ্বংসাবশেষের ওপর প্রতিধ্বনিত হয় আমার গান
শিরধারা বেয়ে নেমে যায় রক্তের ঢল
শূন্যের স্তরে ভয়-ব্যথার অনুভূতি
ধ্বংসযজ্ঞ জুড়ে শুধু ছাইভষ্ম
বাতাস ঠাসা বিলাপে, কেবলই বিলাপ:
খাইবাক, আহ্‌ খাইবাক, আহ্‌ খাইবাক!

জ্বলছে জীবিত মানব শরীর, পশুদেহ!
যদিও মানবতার দাবী মৃত পোড়ানোর
জ্বলছে আমার পিতার কবরও!
এ হাড্ডিসার দেহ নিয়েও আমি দাঁড়াব
অবশ্যই দাঁড়াব,
অবশ্যই অগ্রসর হবো-গুঁড়িয়ে যাওয়া হাঁটু ধরে
চলৎশক্তিহীন পাথরও যদি ভূগর্ভ থেকে
উঠতে পারে অত্যূচ্চতায়-আমি কেন পারব না?
ছায়ারাও কম্পমান হবে আমাকে অবরুদ্ধ করার আগে
''আপনার বাবা কে? কী তার নাম?''
''তোমরা কি চাও চূর্ণ করে দিতে আমার মাথার খুলি?
তারচে বরং এখানে রেখে যাও, এই খাইবাকে
ভূতে পরিণত হওয়া মৃতদের কাছে
ধীরে ধীরে আমিও পরিণত হবো ভূতে''

(কবিতার অনুবাদে যনেষ্ট ¯^vaxbZv নেয়া হয়েছে)

আপ্তি বিসুলতানভের লেখা একটি প্রবন্ধ

''জন্ম ¯^vaxbZvi জন্য''

 চেচনিয়া একটি ছোট রাজ্য (উপত্যকা)কিন্তু এর রয়েছে বহু বছরের সংগ্রামের ইতিহাসবিভিন্ন সময় দেশটি উচ্চাবিলাসী ও  ক্ষমতা লোভী শাসকদের লক্ষবস্তুতে পরিণত হয়েছে, যারা ছিল সমর শক্তিতে অনেক বলিয়ানদখলদারদের প্রত্যেকেই শক্তি প্রয়োগ করে করায়ত্ব করতে চেয়েছে এই ভূখণ্ডটিআর ফলে চেচেনদের জন্য তা  হয়েছে মহাদুর্যোগের কারণশক্তি প্রয়োগের অর্থই হলো যুদ্ধ এবং সব যুদ্ধই ধ্বংস আর অসংখ্য মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়
জন্ম ¯^vaxbZvi জন্যচেচেনরা তাই তাঁদের চ্যালেঞ্জ থেকে কখনোই পিছপা হয়নিএভাবেই তাঁদের জাতিটি সকল বিষাক্ততা থেকে সম্পূর্ণ নিষ্কৃতি পেতে চেয়েছেদখলদাররা যদিও কখনোই বিজয়ী হতে পারেনি কিন্তু তাদের অশুভছায়া কিছুতেই কাটছে নাকারণ বদলে যাওয়া জীবনাচার,  ঘরানা, মন-মানসিকতা, বংশগতিক বৈশিষ্ট্য ইত্যাদি সবকিছুতেই ওদের অপচ্ছায়া বিরাজমানএক কথায় এর অর্থ-আল্লাহ প্রদত্ত মৌালকত্ব বলতে কিছু নেইবাস্তবতা এমন যে, এটি যেন একটি জাতির ধ্বংসাবশেষ এবং চেচেন হয়ে জন্মগ্রহণ করাই যেন পাপ
বর্তমান যুদ্ধ শুধু রাশান-চেচেন সংঘাত নয়, সমস্ত আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে চেচেনদের সংঘাতএকই ঘটনা ঘটিয়েছিল মঙ্গোল ও তাতাররা তামারল্যানে (তিমুরে) এবং এরই ধারাবাহিকতা ঘটে চলছে রাশিয়ায় তিন শতাব্দি ধরে এবং এটা চলতেই থাকবে যতদিন না বিশ্ব বিষয়টাকে অনুধাবন করতে পারে যে সভ্যতার মধ্যে মানুষ সমাজ বিনির্মাণে সফল হয়েছে দমন-নিপীড়নের কঠিন পরীক্ষার মধ্য দিয়েসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ (আইন বা বিধানসমূহ) মানুষের সম্পর্ককে সেখানে নিয়ন্ত্রণ করেছে-যেখানে ব্যক্তির ¯^vaxbZv, সম্মান ও মর্যাদা প্রধান্য পেয়েছে
আধুনিক বিশ্বের পক্ষে চেচেনদের পুনরায় একটি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার যৌক্তিকতা উপলব্ধি করা সত্যি কঠিনকারণ যুদ্ধে তারা বিজয়ী হতে পারে নাব্যর্থ প্রতিরোধ যুদ্ধের বহুবছর পর, আত্মসমর্পণ অথবা মৃত্যু যে কোনো একটিকে বেছে নেয়া ছাড়া যখন উপায় নেই ঠিক এমনই সময় চেচেনরা আরও বেশি করে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ছেফলে ক্ষয় হচ্ছে জীবনের আর তাদের ¯^vaxbZv হয়ে যাচ্ছে সুদূরাপরাহতআবার তাদের বিরুদ্ধে দাঁড় করানো হয়-২০ শতকের প্রথম দিকের সেরা ব্যক্তিগণের দ্বারা ¯^v¶wiZ মিলিটারি তালিকাভুক্তি ও সামরিকীকরণের বিরুদ্ধের ঘোষণা'টিকেওই ঘোষণায় বলা হয়েছিল: ''মিলিটারি তালিকাভুক্তিকরণ মানব মর্যাদার জন্য হীনকর এবং এটি ¯^vaxbZvi জন্যও অনিষ্টকরএকমাত্র জন্মগতভাবে ¯^vaxb মানুষই  প্রকৃত মহত্ব অর্জন করার ক্ষমতা রাখে, সর্বোচ্ছ মূল্যবোধের প্রতিষ্ঠার জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ করতে পারে'' ....
চেচনিয়ার জন্য সবচেয়ে ট্রাজেডির বিষয় হলো- বিশ্ব আমাদের এখনো তেমন জানে না।  আমাদের পূর্ব পুরুষেরা ইউরোপের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এক হাজার বছর আগে মরণাস্ত্র বন্ধের কনভেনশনে ¯^v¶i করেছিলসেই সাক্ষর চেচনিয়া মেনে চললেও অপর সাক্ষরকারীরা মানেনিরাষ্ট্রীয় নিপীড়ন চালানোর ক্ষেত্রে এসব সুযোগেরই সদ্ব্যবহার করছে রাশিয়া
আমরা জীবনের সর্বক্ষেত্রে সর্বোচ্ছ মল্যবোধের প্রতিষ্ঠায় এবং মিথ্যচার, সন্ত্রাস ও দাসত্বের বিরোধীতায় বিশ্বাসীএকমাত্র প্রকৃত মুক্ত মানুষ ¯^vaxbZv‡K শ্রদ্ধ করতে পারে এবং তার জন্য মত্যু বরণ করতে পারেআমরা কাউকে পরাজিত করতে চাই না কিংবা কেড়ে নিতে চাই কারও ¯^vaxbZv| আমরা বিশ্বের সবার ¯^vaxbZv বিশ্বাসী। (ঈষৎ সংক্ষিপ্ত)
বি.দ্র.-কবিতা ও প্রবন্ধের ইংরেজি অনুবাদকের নামের কোথাও উল্লেখ নেইধারণা করি- কবি নিজেই অনুবাদক








0টি মন্তব্য:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এতে সদস্যতা মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন [Atom]

<< হোম