শনিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১

Feyyaz Kayacan Fergar's Poems In Bengali Translation

ফেয়াজ কায়াকান ফের্জার: তার্কির কবি, লেখক ও অনুবাদক
ফেয়াজ কায়াকান ফের্জার( Feyyaz Kayacan Fergar) তার্কি কবি, লেখক ও অনুবাদক। কিন' সারাজীবন ফ্রান্স প্রবাসে কাটিয়েছেন। ফ্রেন্স ভাষায় তার কবিতা ইংল্যান্ডে প্রকাশিত হলে তিনি ১৯৮০ সালে ব্রিটিশ পরাবাস্তববাদী গ্রুফে যোগ দেন। তার্কিশ, ব্রিটিশ ও ফ্রেন্স ভাষায় সমান দক্ষ এই অনুবাদক তিনটি ভাষাকেই সমানভাবে সমৃদ্ধ করেছেন তাঁর অনুবাদ দ্বারা। এ জন্য তাঁকে ট্রিলিঙ্গুয়াল লেখক বলা হত। ‘মিসেস ভ্যালিস ওয়ার: দ্য শেলটার স্টোরিজ অব ফেয়াজ কায়াকান ফের্জার’, ’দ্য ব্রাইট ইজ ডার্ক ইনাফ’ অ্যা টেল ফর শ্রোডস তার্কিতে ফেয়াজের লেখা খুবই উল্লেখযোগ্যবই, পাওয়া যায় অ্যামাজন.কম-এ। তাঁর অনূদিত সাহিত্য কর্মের অন্যতম কাজ হলো, অকতাই রিফাতের ‘সিলেক্টেট পোয়েমস’, পোয়েমস অব ক্যান ইউসিল ইত্যাদি। উল্লেখ্য যে, তাঁর স্ত্রী জোলা তার্কির খুবই নন্দিত চিত্র শিল্পী। সৃজনশীল ও অনুবাদ কর্মে তার উদ্যম উৎসাহ জাগানিয়া। সমপ্রতি এই কবি ইন্তেকাল করেছেন। সম্পাদনা করেছেন: মডার্ন তার্কিশ প্রোয়েট্টি। ভালোবাসি একজন পথিকের মত কখনো আমি তোমায় ভালোবাসিনি কখনো আমি তোমায় ভালোবাসিনি। ভালোবেসিছিলাম, যখন দু’জন গান গেয়েছিলাম ক্লান্তরাতের তীরে। ভালোবেসেছিলাম, যখন তুমি হাসতে ফুলের সঙ্গে, ভালোবেসেছিলাম, যখন তোমার চোখ ছিল ফুটন্ত গোলাপের মতো। আর ভালোবেসেছিলাম নক্ষত্রদের। সেপ্টেম্বরের রাতে তারা চলতে চলতে থেমে যেত তোমার চোখের পাতায়। কখনো আমি তোমায় ভালোবাসিনি। ভালোবেসেছিলাম, তোমার বিদায়বেলা যখন তুমি রাস্তায় ছেড়ে গিয়েছিলে একাকী আমায়। ভালোবেসেছিলাম বুলেটগুলোকে ভালোবেসেছিলাম কান্নাকে, কান্না আমার প্রিয় হয়ে গেছে যখন থেকে তুমি ভুলে গেছে। যখন আমি বুঝতে পারলাম যে, আমি একা, ভালোবাসতে শিখলাম নিজের পায়ের সোজা দাঁড়িয়ে থাকাকে। ভালোবেসেছি নিঃশেষিত অবস'ায় যখন স্মরণ করেছি তোমাকে। ভালোবাসি তোমাকে ছাড়াই এই অস্তিত্বমান থাকাকে আর ভালোবাসি রুটি। তোমার কণ্ঠস্বরকে জুলাইয়ের সূর্যের মতো ভালোবেসে আমি হারিয়েছি পানি ভোরের এক পশলা বৃষ্টি। আমি ভালোবেসেছি তোমায় রাতে প্রবাহমান বাতাসের মতো। কখনো আমি তোমায় ভালোবাসিনি। আমি ভালোবেসেছিলাম তোমার গান যা তুমি গাইতে পাখিদের উদ্দেশ্যে। এপ্রিলের নীল লতাগুল্মকে বাদ দিয়ে আমি মজেছিলাম তোমার কথায় যদিও জানা ছিল বসন্তের আরেক নাম নিঃসঙ্গতা। এবং এভাবে অপার্থীব শীতলতার অনুভূতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত হতাম আমি। ছেলেরা বলগাম বিক্রি করে নতুন গান মুক্তি পায়। আমি ভালোবেসেছিলাম, তোমার বিজয় বার বার তোমার কাছে পরাজিত হয়ে। আমি আগুনে নিক্ষিপ্ত হয়েছিলাম সাগরে যেমন পুজারিরা নিক্ষেপ করে গোলাপ। আগুন আমি ভালোবাসলাম, যখন জ্বলছিলাম আগুনেরই মতো। কখনো আমি তোমায় ভালোবাসিনি। আমি ভালোবাসলাম আগুন কিন' কখনোই তোমাকে না। আমি ভালোবাসলাম আগুন কিন' কখনোই তোমাকে না। যখন আমি কাউকে ভালোবাসি ভালোবাসি একজন পথিকের মতো...! এক রাতে একটি হরিণ পর্বত থেকে নেমে এলো তোমার হৃদয়ে। এরপর আরেক রাতে সেটি একটি কবিতা হয়ে আলো জ্বালল সেখানে। প্রতিটি মানুষের নিঃসঙ্গতা তার একাকীত্বের কষ্টের খুব গহীন থেকে ভোরের কুয়াশা থেকে নিষ্ঠুর দুঃখবোধ থেকে তোমার কান্না জড়ানো মুখ থেকে মানব অস্তিত্ব-তার প্রার্থনার ভাষা খুঁজে পায়। ডালিম, ডুমুর, জলপাই আর আমার হৃৎপি গোলাপ সম্মুখে এবং যে আশায় আমি বাধি বুক সবই অপ্রতুল, তোমা বিহনে। তুমি রয়েছ সামনে সবসময়, তুমি রয়েছ সামনে সবসময়, কখনো আমি তোমায় ভালোবাসিনি। তোমায় ভালোবেসেছিলাম, যখন তুমি চলে গিয়েছিল পৃথিবীকে ভালোবেসেছিলাম, যখন তুমি ফিরে এসেছিল। কিন' যখন ছিলে-ভালোবাসিনি- ভয়ে ছিলাম যদি তোমাতে আসক্ত হয়ে পড়ি! যাহোক, খুব হাসতাম যখন ট্রেনের জানালায় আমার দোলায়মান রুমাল দেখে তুমি ছুটে আসতে আর তুলে নিতাম তোমাকে। প্রথম তুষারপাতে যখন ঢাকা পড়ত উপত্যকা ঢাকা পড়ত তোমার মুখ যেন বা কবর হতো তোমার আর ওটাই ছিল ভীষণ সুন্দর। নিজের ভেতরে আমি হত্যা করেছিলাম তোমায়। কখনো আমি তোমায় ভালোবাসিনি। ভালোবেসিছিলাম, যখন দু’জন গান গেয়েছিলাম ক্লান্তরাতের তীরে। ভালোবেসেছিলাম, যখন তুমি হাসতে ফুলের সঙ্গে, ভালোবেসেছিলাম, যখন তোমার চোখ ছিল ফুটন্ত গোলাপের মতো। আর ভালোবেসেছিলাম নক্ষত্রদের। আমি ভালোবাসলাম আগুন কিন' কখনোই তোমাকে না। আমি ভালোবাসলাম আগুন কিন' কখনোই তোমাকে না। যখন আমি কাউকে ভালোবাসি ভালোবাসি একজন পথিকের মতো...! [দেশ প্রেমের অসাধারণ এই কবিতাটির সঙ্গে কবি পাবলো নেরুদার একটি কবিতার বেশ মিল দেখা যায়। অনুবাদক কবি নিজেই]

Amir Aziz’s Poem ''Sab Yaad Rakha Jayega''

‘‘সবকিছু মনে রাখা হবে’’ ভারতীয় তরুণ কবি আমির আজিজের ভাইরাল হওয়া কবিতা গাজী সাইফুল ইসলাম আমির আজিজ (অসরৎ অুরু) তরুণ কবি জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ার ছাত্র। তার কিছু কবিতা গত বছরের প্রথমার্ধ থেকে বেশ আলোচিত। বিশেষ করে তার ‘ঝধন ণধধফ জধশযধ ঔধুবমধ' কবিতাটি। বব ডিলান ও জনি ক্যাশের অনুকরণে গত বছর কবিতাটির একটি আবৃত্তি ভিডিও প্রকাশ করেছিলেন কবি আমির আজিজ নিজে। মার্চ ২০১৯ পর্যন্ত সেই ভিডিওটি ২,৫০,০০০ দর্শক পায়।
‘উইকিলিকস’এর প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসেঞ্জ বর্তমানে ইংল্যান্ডের একটি কারাগারে বন্দী। সেখানে একদিকে আমেরিকার চাপে রাষ্ট্রীয়ভাবে তার বিচারের আয়োজন চলছে অন্যদিকে শত শত মানুষ, বিশেষ করে, কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, দার্শনিক, গায়ক, মানবতাবাদীরা তার মুক্তির জন্য রাস্তায় নামছে। তার মুক্তির দাবীতে শত শত প্রতিবাদকারী লন্ডনে সমবেত হচ্ছে। এমনই একটি জমায়েতে গত ২২ ফেব্রূয়ারি ২০২০,‘পিঙ্ক প্লয়েড’ ব্যান্ডের গিটারিস্ট, রক আইকন, জর্জ রজার ওয়াটারস আমির আজিজের কবিতাটির ইংরেজি ভার্ষন আবৃত্তি করেন। এর আগে তিনি বলেন: আমরা এখানে সমবেত হয়েছি একটি বৈশ্বিক আন্দোলনে, এই ভঙ্গুর বিশ্বের জন্য খুবই দরকারী একটি আন্দোলনের ওপর আলোকপাত করার জন্য। তিনি আমির আজিজের পরিচয় দিতে গিয়ে বলেন: দিল্লীর একজন তরুণ কবি, আন্দোলনকারী, যিনি লড়ছেন মোদী আর তার ফ্যাসিবাদী বৈষম্যমূলক নাগরীকত্ব আইনের বিরুদ্ধে। ‘পিঙ্ক প্লয়েড’ ইংলিশ ব্যান্ড কবিতাটির সঙ্গে নিচের ক’টি বাক্য যুক্ত করে:‘‘তুমি পৃথিবীতে অবিচার রচনা করছ/ আমরা বিপ্লব রচনা করব আকাশে। সবকিছু মনে রাখা হবে। সবকিছু রেকর্ড হচ্ছে।’’ এ যেন ফিলিস্তিনি কবি মাহমুদ দারবীশের ‘আইডেন্টি কার্ড’ কবিতার প্রতিধ্বনি। ‘পিঙ্ক প্লয়েড’এর ওই আবৃত্তি ভিডিওটিও সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বজুড়ে ভাইরাল হয়ে যায়। সবকিছু মনে রাখা হবে মূল (উর্দু)-আমির আজিজ ইংরেজি অনুবাদ: পিঙ্কপ্লয়েড তুমি রাত রচনা কর, আমি রচনা করি চাঁদ। যদি তুমি আমায় জেলে পুরে দাও, তবে আমি প্রাচীর ডিঙিয়ে লিখতে থাকব। যদি তুমি আমার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করো, তবে আমি লিখতে বসব যে সব অবিচার থেকে দুর্ভোগ আমাদের। যদি তুমি আমায় খুন করো, তবে আমি প্রেতাত্মা হয়ে ফিরব এবং লিখতে থাকব। এবং তুমিই যে খুন করেছ সেই প্রমাণাদি হাজির করব। যদি তুমি বিচারের নামে কোর্ট বসিয়ে তামাশা কর; তবে ন্যায় বিচার পাবার জন্য আমরা দেয়াল ও রাস্তাগুলোও ‘কালি’ করব যথেষ্ট উচ্চ স্বরে আমাদের দাবী ঘোষণা করব যাতে শ্রবণ প্রতিবন্ধীরাও শুনতে পায়। যথেষ্ট পরিষ্কার হস্তাক্ষরে লিখব যাতে অন্ধরাও সে সব পড়তে পারে। যদি তুমি কালো পদ্ম লিখ তবে আমি লাল গোলাপ লিখব। যদি তুমি এ ধরায় আমাদের নিপীড়ক হও, তবে পরকালে তুমিও নিপীড়িত হবে। সব মনে রাখা হবে। সবকিছুই মনে রাখা হবে। সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু হয়েও তুমিই আমায় খুন করেছ লাঠি আর গুলি চালিয়ে; সে সব স্মৃতি আমাদের ভাঙা বুক তুলে রাখবে। সব মনে রাখা হবে। সবকিছু মনে রাখা হবে। আমরা সকল মিথ্যাচারের ‘কালি’ করব, এটা আমরা ভালো জানি। হয়তো আমাদের রক্ত দিয়েই এ স্পষ্ট সত্যটি লিখব এবং কোনোদিন তা প্রকাশও করব। প্রকাশ্য দিবালোকে তোমরা টেলিফোন, ইন্টারনেটসহ সকল যোগাযোগ মাধ্যমে জনগণের প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করছ এবং এরপর পুরো শহরটিকে শীতল রাতের এক বন্দীশালা পরিণত করেছ; হঠাৎ আমার বাড়ি-ঘরে অনধিকার প্রবেশ করেছ, ধ্বংস করেছ আমার ছোট্ট জীবন আমার প্রিয়তম সন্তানকে রাস্তার মাঝে হত্যা করেছ এবং এরপর যা কিছু ঘটেছে সে সম্পর্কে কোনো মনোপীড়ন ছাড়াই জনসমক্ষে তুমি হাসছ; সব মনে রাখা হবে। সবকিছু মনে রাখা হবে। দিনের বেলা তুমি মিষ্টি কথা বলো; এবং এরপর জনতাকে আশ্বাস দাও যে, সবকিছু ঠিকঠাক আর নিয়ন্ত্রণে আছে স্বব্ধ করে দিয়ে সকল সোচ্চার কণ্ঠ। রাতের বেলা নিপীড়ন আর আক্রমণ করো লোকদের-যারা দাবী তোলে অধিকারের। তোমরাই আক্রমণ করে আক্রমণকারীর দোষ চাপাও আমাদের ওপর। এসবই মনে রাখা হবে। আমি আমার হাড়ের ওপর এইসব নির্মমতার ঘটনা খোদাই করব। তুমি আমার জন্ম-পরিচয়ের দলিলাদি চাইছ। জেনে রাখ, নিশ্চয়ই আমি আমার অস্তিত্বসংক্রান্ত সকল প্রমাণাদি দাখিল করব। এই যুদ্ধে তোমাকে শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত লড়তে হবে এবং এর সবই মনে রাখা হবে চিরদিনের মত। তুমি যেভাবে দেশের মানুষকে বিভক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছেন-এটাও মনে রাখা হবে আর জনতাকে ঐক্যবদ্ধ করার আমাদের যে উদ্যোগ আর প্রচেষ্টা তাও মনে রাখা হবে। এবং যখন আলোচনা হবে ‘কাপুরুষোচিত’ কর্ম সম্পর্কে, তোমার কর্ম উদাহরণ হিসেবে সামনে আসবে। এবং যখন আলোচনা হবে জীবনের চলার পথ সম্পর্কে, আমাদের নামগুলো সামনে আসবে। অবশ্যই তখন আলোচিত হবে কিছু লোক যে দৃঢ় মনোভাবাপন্ন ছিল। যে সব লোক নীতি-আদর্শে অটল তাদের নীতিচ্যুৎ করার জন্য, দরকার হলে, তোমরা হাতুড়ি চালাও কিছু লোক বশ্যতা মানে না, বিক্রি হয় না, যেমন তোমরা হও। কিছু লোক অসম্ভব পরিসি'তিতেও দাঁড়িয়ে থাকে কিছু লোক তাদের মৃত্যু সংবাদ শুনেও জীবিত থাকে। চোখ তার পলক ফেলতে ভুল করতে পারে; জগৎ তার সঠিক অবস'ানে ঘুরতে ভুল করতে পারে; কিন' আমাদের স্বাধীনতা ছিনিয়ে নেওয়ার তোমার প্রচেষ্টা সফল; দুরাত্মার প্রতিধ্বনি সর্বদা মনে রাখা হবে। সুতরাং তোমার নাম নিয়ে লোকেরা চিরদিন তোমাকে অভিশাপ দিতে থাকবে; তোমার মৃতদেহের প্রতি অসম্মান করবে ঘৃণার কালো কালি ছুঁড়ে। তোমার নাম, দেহাবয়বের উপসি'তি কোনোদিন কেউ ভুলবে না। এর সব কিছুই চিরকাল মনে রাখা হবে। (কবিতার অনুবাদ-গাজী সাইফুল ইসলাম)

মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০১৯

Sanaz Davoodzadeh Far's Poems in Bengali Translation


সানাজ দাভুদজাদে ফার: লাক্সিমবুগ প্রবাসী ইরানের তরুণ কবি

সানাজ দাভুদজাদে ফার (Sanaz Davoodzadeh Far) লাক্সিমবুগ প্রবাসী ইরানিয়ান কবি। লাক্সিমবুর্গে হলো বেলজিয়াম, ফ্রান্স ও জার্মানি পরিবেষ্ঠিত ইউরোপের ছোট্ট একটি দেশ। ফার সেখানে একজন ফ্রিল্যান্স পেইনটার। ফার শিল্পের পথ পা রাখেন থিয়েটার ও সঙ্গীত দিয়ে। বিশেষ করে ইরানিয়ান ক্ল্যালিসিক্যাল সঙ্গীত। পারি মালকি ও মোস্তবা আসগরির মত বিখ্যাত সঙ্গীত শিল্পীদের কাছে তালিম নিয়েছেন তিনি। অভিনয় করেছেন বহু নাটকে এবং পুরষ্কার জিতেছেন। এরপর শুরু করেন গল্প ও কবিতা লেখা। ক্লাসিক্যাল ধারায় রচিত তার কবিতা সে দেশের বহু গুরুত্বপূর্ণ পত্রিকা-সাময়িকিতে ছাপা হয়েছে, হচ্ছে। তার কবিতা ইংরেজি, আরবি, ফরাসি, স্পেনিশ, জার্মান, কুর্দিশ ও মরক্কোন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। তার প্রথম বই আই ওয়াক অন দ্য ডেড লেটারস আরবি ভাষায় অনূদিত হয়েছে এবং সিরিয়ার তামোজ পাবলিশিং সেটি প্রকাশ করেছে। ফরুঘ ফারুকজাদের পদাঙ্ক অনুসারী সানাজ দাভুদজাদে একজন ফেসবুক অ্যাক্টিভিস্টও। বহু দেশ যেমন কায়রো, ওমান, ইরাক, তিউনিয়শিয়া, রোমানিয়া, তার্কি  প্রভৃতি দেশের সাহিত্য সম্মেলনে তিনি অংশ গ্রহণ করেছেন। প্রবাসে থেকেও বিভিন্ন সময় ইরান সরকারের গণনিপীড়নমূলক বিভিন্ন পদক্ষেপের বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টির চেষ্টা চালিয়েছেন তিনি।

Sanaz Davoodzadeh Far Poet, Painter & Activist

সানাজ দাভুদজাদে ফারের কবিতা

আমি হাঁটি, মৃত শব্দদের ওপর দিয়ে
এক.
আমাদের চার চোখের যখন মিলন ঘটেছিল
মাঝখানে ছিল ক’টি সিগারেটের ধোঁয়ার দেয়াল
আর আমাদের দেখা হওয়ার আগে
এককাপ গরম চায়ে ছিল একটুকরো চিনি আলোড়ন।
এ অভিজ্ঞতাই সারাজীবনের পাথের আমাদের।
দুই.
আমি যখন ভালোবাসতে শুরু করলাম
তোমার ভালোবাসা তখন শেষ
এরপর, বছর ধরে শুধু দৌড়ে গেছি আমি।
তিন.
তুমি যদি খুলে দাও তোমার সীমান্ত
ভিসাটিসা ছাড়াই
তোমার মাঝে হবো স্থানান্তরিত আমি 
আমার মামলা রাজনৈতিক নয়
আমি পালিয়েছি একজন প্রেমিকা হিসেবে
এখন যদি ঘরে ফিরি
ওরা সেলাই করে দেবে আমার জিহŸা ও ঠোঁট
সীমানার বাইরে ভালোবাসা
ঘর ছাড়া, কথাবার্তা ছাড়া।
চার.
তোমার কথার বাষ্প
ভুল করে ঘিরে রেখেছে আমার কল্পনা
তাকাও আমাদের ভাগাভাগির স্বপ্নের দিকে
তাদের অবস্থান খুবই নিকটে, নূন্যতম দূরত্বে
অথচ তোমার হাত গুটিয়ে নিয়েছ আমার থেকে, বহুদিন আগেই।
পাঁচ.
জন্মের সময় আমি কেঁদেছি
বেঁচে থাকার সময় চিৎকার করেছি
পৃথিবী ছেড়ে যাওয়ার সময়
মুখে থাকে যেন মোনা লিসা হাসি।
ছয়.
আমি যখন ভালোবাসার সুগন্ধির ঘ্রাণ নিই
কোনো কারখানার ভক্তই পারে না আমার সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে
পাপড়ির মত টুকরো টুকরো করে ছিঁড়ে ফেলো আমায়
এরপর পাঠিয়ে দাও প্যারিসে
এরপর একটি নাম দাও ‘জুলিয়েট’
তখন দেখবে আমিই হব সর্বাধিক বিক্রি হওয়া সুগন্ধি।
সাত.
একটি ভূমিকম্প যখন ধ্বসে দেয় কোনো জনপদ
আমার হৃৎপিণ্ডে ধ্বস নামে
পৃথিবী বরাবর আমার হৃৎপিণ্ডে হলো একটি দোলনা
এবং এর ভূকম্প এর সুরেলা এক সঙ্গীত আমার বেদনায়।
ওহ পৃথিবী, তুমি সুখে গাও তোমার ভুলের সঙ্গীত।
সমস্ত বিকল্প রয়েছে টেবিলটির ওপর
আঁকতে পারো একটি সকালচিত্র তোমার কথায়
দেখাতে পারো তোমার অনুপস্থিতি পাশপাশি
হাত আর ঠোঁটের জন্য একইরকম একটি বাক্যাংশ পেতে
চুপচাপ নিরবতাকে ভরতে পারো একটি কাঁচপাত্রে
আর তখন আমি পান করে নেব ছায়া।
আট.
আমি যখন বিছনায় শুয়ে ছিলাম
সেবিকা এসেছিল
কুয়াশাও এসেছিল তখনই
চারপাশে তখন শুধু পানি পড়ার শব্দ।
সেবিকা চলে গেল,
আমি রয়ে গেলাম জায়গারটির উত্তরে 
ভেতরের সবকিছু তখন চক্চকে ঝক্মকে
ভেজা গন্ধ ভাসছে বাতাসে।
নয়.
আমি একটি গুলিভরা পিস্তল
আমি যদি চোখের পলক ফেলি, গুলিগুলো তোমাকে হত্যা করবে।
যদি আমি তাদের বন্ধ না করি,
আমার সকল উপাদান আমার কাঁধে একটি পিঠব্যাগের রূপ নেবে
এবং যা ভরে উঠবে গান পাউডারে,
আমি তখন পরিণত হবো একটি বোমায়।
যদি আমি নিজেকে বিস্ফোরিত না করি, ফেটে যাব আপনিই।
এতে মনে হতে পারে যে, দুজনেই আমরা যুদ্ধ করছি মরার জন্য।
আমি হাঁটি
বুলেটগুলো ফুটে আমার চারপাশে ফুস্ফাস, ঠুসঠাস শব্দে।

অঙ্কন
গণিতে তার অসম্পূর্ণ উপস্থিতি
ঠোঁট ছাড়া মুখের মত
তার কালো চোখেরা কাঁদছে আমার তুলিতে
আমার চুলগুলো উড়ে গিয়ে পড়ে
তার মুখের ওপর
বাতাসের ধাক্কায় যেমনটি ঘটে সাধারণত
এরপর দৃশ্যপট থেকে উধাও হয় তার চেহারাখানি
তবু ছবিটি বিক্রি হয় ভালো।
তোমাকে উপস্থিতি ছাড়া
তোমার উপস্থিতি ছাড়া
আমি জমাটবাধা এক খণ্ড ঠাণ্ডা সিমেন্ট
শেওলা ছাড়াই শেওলাধরা
কর্তিত একটি গাছের সবুজ গুড়ি
কিন্তু এটি একটি অশুভ লক্ষণ যে,
তোমাকে ছাড়া
আমি হতে পারি না কোনো কিছু,
এমনকি
ফোটাতে পারি না একটি গোলাপও...
ফড়িং
তুমি যেমন উদ্ধৃতিযোগ্য, একটি ফড়িং
আমার বুকের বর্ণগুলোর ওপর বস, রঙ ছড়াও
এরপর উড়ে যাও অন্যত্র।
বর্ণগুলোর ওপর তোমার হাত রাখলেই
তা থেকেই ওরা গর্ভবতী হয়
ভাষাটি বংশ বৃদ্ধি করে
এবং নতুন সব বর্ণে লিখা হয় নতুন চিঠি
আর সে সব আমি পড়ি গভীর মনোনিবেশে।

মধ্যপ্রাচ্যের মায়েদের সঙ্গে

যুদ্ধে কেড়ে নিয়েছে তার ছোট্ট মেয়েটিকে
তার দু’চোখের সামনে থেকে
তার হৃদয়ের বিশাল ঔজ্জ্বল্যের মাঝখান থেকে
চুরি করেছে রঙধণু রঙের ওড়নাটি
যখন মেয়েটি তার পুতুলটিকে কোলে নিয়ে
ঘুরে বেড়াচ্ছিল বাইসাইকেলে।
একটি গোলকার বস্তু তাকে থামিয়ে দিয়েছে
বিদ্ধ হয়ে তার গলদেশে চুরি করেছে তার হাসি।
ওহ্ আম্মু...
গভীর দুঃখে পতিত হলো সে,
তাকে বাঁচনোর চেষ্টা ছাড়াই
তার প্রাণহীন দেহের চারপাশে উড়তে লাগলো
রাজ্যের ধূলি।

Gazi Saiful Islam, Poet & Translator



রবিবার, ৩ নভেম্বর, ২০১৯

Thai born Refugee poet Lang Leav’s poems in Bengali Translation

থাই উদ্বাস্তু তরুণী কবি ল্যাঙ লিভযার প্রতিটি কবিতার বই আন্তর্জাতিক বেস্টসেলার

গাজী সাইফুল ইসলাম
কবি, অনুবাদক গাজী সাইফুল ইসলাম

ল্যাঙ লিভ থাই তরুণী কবি, তার প্রতিটি বই আন্তর্জাতিক বেস্টসেলা। তিনি একজন সোসাল মিডিয়া সেনসেশনও। ইতোমধ্যে কবিতার জন্য তিনি জিতে নিয়েছেন ‘কোয়ান্টাস স্পিরিট অব ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড’ আর বহুল প্রত্যাশার চার্চিল ফেলোসিপ। তার লোলাবিস বইটি ২০১৪ সালে  ‘গুডরিড চয়েস অ্যাওয়ার্ড ফর পোয়েট্টি’ জিতে নেয়। ল্যাঙ লিভ তার প্রথম কবিতা শেয়ার করেন ২০১২ সালে Tumblr-এ। একই বছর নিজ নিজ খরচে প্রকাশ করেন তার প্রথম কবিতার বই ‘লাভ এন্ড মিসঅ্যাডভেঞ্চার’। বহু পত্রিকা- ম্যাগাজিন যেমন সিডনি মর্নিং হেরার্ল্ড, দ্য স্ট্র্যাইট টাইমস, দ্য গার্ডিয়ান, দ্য নিউইয়র্ক টাইমস ইত্যাদি তাকে নিয়ে ফিচার করেছে। বর্তমান নিবাস নিউজিল্যান্ডে, সঙ্গে আছে সঙ্গী মাইকেল ফাউডেট।
সমসাময়িক কবি-লেখকদের মধ্যে ল্যাঙ লিভই সম্ভবত একমাত্র কবি যার বক্তব্য বড় বেশি আবেগ জাগানিয়া ফলে বই প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে তরুণরা তা লুফে নেয়। বইয়ের দোকানগুলোতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কবিদের বইয়ের পাশাপাশি তার বই শোভা পাচ্ছে। সাধারণ পাঠকের সঙ্গে বড় কবিরাও তার বই গোপনে নিচ্ছেন তার ভাব নিজেদের মধ্যে সঞ্চারিত করার জন্য। কথোপকথনের ভাষা ব্যবহার করে ঐতিহ্যবাহী স্তবকে তিনি সাজান তার কবিতা-যাতে যে কেউ তার কবিতা পড়ে বুঝতে পারে, বিশেষ করে নিয়মিত যারা নতুন কিছু খোঁজেন। তার পাঠকরা ল্যাঙ লিভ কীভাবে লিখছে সেটা না নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে নতুন কী লিখেছে সেটাই বরং দেখছে। এখন প্রশ্ন হলো, ল্যাঙ লিভের কবিতায় নেশা ধরিয়ে দেবার কী কারণ থাকে সেটাই এখন আমাদের খুঁজতে হবে?
কারণ হলো তার কবিতায় থাকে প্রেম, বিচ্ছেদ-বিরহ, নতুন সম্পর্ক এবং আত্মার ক্ষমতায়ন সম্পর্কে এক ধরনের অন্তর্দৃষ্টি, প্রজ্ঞা আর উৎসাহ। তার বইয়ের প্রতিটি পৃষ্ঠায় তরুণদের জন্য থাকে প্রবহমান এক আকর্ষক শক্তি, সম্পর্কের গভীরতা, টানাপোড়েন, ভেঙে যাওয়ার বেদনা পাঠকদের মধ্যে মুহূর্তে ছড়িয়ে যায়। তার বই বেস্টসেলার হওয়ার আরেকটি কারণ তার উৎসাহী পাঠক। সোসাল মিডিয়া তাকে যথেষ্ট সাহায্য করে। বই বের হওয়ার সংবাদ তাদের মাধ্যমে কম সময়ের ছড়িয়ে যায়। যেমন ‘লাভ লুকস প্রেটটি অন ইউ’ বইটি বাজারে আসার আগে Yee S Ai-Yin (যে কিনা লিভের একজন একনিষ্ঠ থাই পাঠক, মালয়েশিয়ায় প্রবাসী) লিখেছে: ‘‘আমি নিজেও কবিতা লিখি। আপনার কাছ থেকে পাই প্রচুর অনুপ্রেরণা। আপনার প্রথম বই লাভ এন্ড মিসঅ্যাডভেঞ্চার এখনো আমার কাছে আছে। এবং আমি প্রতিবার নতুন বইয়ের অপেক্ষায় থাকি, যাতে সেটি আমার বুকসেলফের শোভা বাড়াতে পারে। মালয়েশিয়াতে আমাদের দেখা হয়েছিল। আশা করি আবার যখন আপনি এখানে আসবেন-আমার কেনা বইয়ে অটোগ্রাফ দেবেন। আপনার লেখালেখির অন্তহীন সাফল্য কামনা করি।’’
দু’টি আত্মা কি প্রেমে পড়তে পারে? এক পাঠকের এমন একটি প্রশ্নের উত্তরে ল্যাঙ লিভ বলেছিলেন: ‘‘হ্যাঁ, পারে। দু’টি আত্মার প্রেমে পড়া অর্থ হলো, তাদের নিকটবর্তী হওয়া। পরস্পরের হাত ধরা। হাসি দেখে মনের কথা বুঝতে পারা। এমনকি এতটুকুন স্পর্শ, আত্মার দিনপুঞ্জি নেই, ঘড়ি নেই, নিকট-দূরত্বের ব্যাপার অনুধাবনের ক্ষমতা নেই, তবু মনে রাখে।’’
তার দেশের সমালোচকগণ লিখেছেন: ‘‘অন্যের মধ্যে আবেগ ছড়িয়ে দেয়ার ক্ষমতা ল্যাঙ লিভের মত আর কারও নেই। আধুনিক কবিতার প্রভাবশালী লেখিকা হিসেবে তিনি তার দেশের এমনকি বিদেশেরও নতুন প্রজন্মের কবিদের দারুণভাবে অনুপ্রাণিত করছেন।’’

ল্যাঙ লিভের কবিতা

আমি দুঃখিত

এই কবিতাটি আমি বইয়ে দিয়ে দিলাম
যদিও এখনও শেষ হয়নি এটি
আরও কিছু বাক্য লেখার
ধৈর্য্য ছিল না আমার, আমি দুঃখিত।

ফুলগুলো আমি তুলে নিয়েছিলাম
ওদের ফুটার আগেই
সূর্য তখনও আলো দিচ্ছিল
প্রার্থনার মত করে
তাদের পেটেলে রঙের ওপর
আমি দুঃখিত।

যে মানুষটিকে আমি
ভালোবেসেছিলাম, শুধু ভালোবেসেছিলাম
ভালোবাসা কী বোঝার আগে
কারও কাছে তা নিবেদনের আগে
আমি ছিলাম অপ্রস্তুত, আমি দুঃখিত

প্রাণবন্ধু

জানি না কীভাবে তুমি আমার এত বেশি পরিচিত, হয়তো এ জন্যই তোমাকে আরও বেশি করে জানার প্রয়োজন বোধ করিনি। অবশ্য এ জন্যই মাঝেমধ্যে প্রশ্ন জাগে: তুমি কে? কেমন করে প্রতিটি হাসিতে, ফিসফিসানিতে তুমি আরও নিকটে টেনে নিচ্ছ আমায়। মনে মনে এক অসম্ভব উপসংহার টানি, আগে থেকেই চিনতাম তোমায়। আগেও তোমায় ভালোবেসেছি, অন্য কোনো সময়ে, অন্য কোনো খানে, অন্য কোনো অস্তিত্বে।



গোলাপ

তুমি কখনো গোলাপ ভালোবেসেছ?
দেখেছ তার ধীরলয়ে প্রস্ফুটিত হওয়া;
এবং যেভাবে তার সৌন্দর্য় অবমুক্ত হয়?
তুমি তার সুগন্ধে মাতাল হয়েছিলে
তুমি কি কখনো তার নাচ দেখেছ?
তার সব পাতা শিশিরে ভেজা থাকত।
এবং বাতাসের রোমান্সে একটু একটু কাঁপত।
তুমি সবচেয়ে বেশি পছন্দ করতে গোলাপ
এরপর তাকে, হ্যাঁ, যে তোমাকে অনেক ভালোবাসত।
তুমি কি কখনো চেয়েছ তাকে?
সেইসব রাতে, যেগুলোতে তুমি একটুও ঘুমোতে না
মনে পড়ে তোমার? আপাতত তার চেহারা অস্পষ্ট
স্মৃতির অনেক একটি দীর্ঘ রেখা হয়ে গেছে সে..
তুমি কি কখনো গোলাপ ভালোবেসেছ?
কাঁটার আঘাতে কি রক্তাক্ত হয়েছে কখনো?
এবং প্রতিটি রাতে তাকে যে শপথ করাতে বাইরে যাওয়ার আগে
এরপর ভোরের সময়টাতে আরও বেশি ভালেবাসত...

বিশ্বাস

আমি প্রার্থনার মত করে তোমার নাম জপি-সকল স্বর্গীয় আশা নিয়ে
তোমার হস্তরেখা উদ্ধার করেছি আমি এবং পরিত্রাণের একটি মানচিত্রও এঁকেছি।
তোমার হৃৎপিণ্ডের স্পন্দন আমি শুনছি আর উত্তর দিচ্ছি যেমন তারা ডাকছে আমায়।
প্রিয় বন্ধু, আহ্ বন্ধু, ফেলে গেছে আমায়
এখন যা ইচ্ছে তোমার করতে পার।
ভালোবাসা তুমি ত্যাগ করেছ-কোনোকিছু না জানিয়ে,
এরপরও কেন তোমাকেই আমায় ভালোবাসতে হবে?
আমার জন্য এই কি সবচেয়ে ভালো যে, জীবনের
সবগুলো বছর, দিন, ঘণ্টা তোমার পথ চেয়ে থাকি?
মূল্যবান সামান্য কিছুই তুমি দিয়েছিল আমায়,
বিনিময়ে আমিও দিয়েছি, ঝরা ফুলে শিশিরের মত
আমার ভালোবাসা, তুমি নির্দয়ভাবে ছুঁড়ে ফেলেছে আমায়,
আামর সৌন্দর্য্য, আমার শক্তি, আমার মন
যা কিছু ঈশ্বরের দান সবই গ্রাস করল
তোমার উদ্ধত্যপূর্ণ গর্ব।
আমার ভালোবাসা, তুমি ভুলে গেছে আমায়
দয়া করে বলো, কী ছিল অপরাধ, কী শুনেছিলে?
এখন তোমার স্মৃতির ঈর্ষাপরায়ণ পাহারাদার আমি
তোমার সঙ্গে কবরস্থ করেছি আমার অন্তর।

চলতি সংখ্যা পাক্ষিক অনন্যা (1-15 নভেম্বর 2019)

কবি ল্যাং লিভ



মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর, ২০১৯

Iraki-Spanish Poet Abdul Hadi Sadoun's poems in Bengali Translation


ইরাকি-স্পেনিশ কবি ও অনুবাদক 

আব্দুল হাদি সাদৌনের কবিতা


অনুবাদ-গাজী সাইফুল ইসলাম

আব্দুল হাদী সাদৌনের (Abdul Hadi Sadoun জন্ম  ১৯৬৮ সালে ইরাকের বাগদাদে। বর্তমান নিবাস স্পেনে। ১৯৯৩ থেকে প্রবাসে থিতু হয়েছেন। ১৯৯৭ থেকে সম্পাদনা করেন আরবি ভাষায় প্রকাশিত সাহিত্য বিষয়ক জার্নাল আালবাহ্(Alwah)। এ জার্নালের বিশেষত হলো, এতে প্রবাসী আরব কবি লেখকদের লেখাই প্রাধান্য দিয়ে ছাপা হয়। তিনি ওখানকার বেশ কটি অ্যাকাডেমিক সেন্টারে আরবি সাহিত্যের ওপর অধ্যাপনা করেন। বক্তৃতা করেন হিপ্পানিক সাহিত্যে আরব সংস্কৃতির প্রভাব ও উপস্থিতি ইত্যাদি বিষয়ে। তিনি বহু গুরুত্বপূর্ণ স্পেনিশ সাহিত্যকর্ম আরবি ভাষায় এবং আরবি সাহিত্যকর্ম স্পেনিশ ভাষায় অনুবাদ করেছেন। যেমন অ্যান্তোনিও মাচাদো, ভিসেন্ট আলেক্সান্দ্রে, গর্সিয়া লোরকা, জোয়ান র‌্যামন জিমনেজ, হোর্হে বোর্হেস, আলবার্তি প্রমুখ। লাতিন আমেরিকার ছোটগল্প ও আধুনিক স্পেনিশ কবিতা। তার নিজের কিছু গল্প-কবিতাও ইংরেজি স্পেনিশ, জার্মান, ফ্রেন্স, ইতালিয়ান, ফার্সি, কুর্দিস কাটালান ভাষায় অনূদিত হয়েছে। এ কবির সঙ্গে ফেসবুকে বন্ধুত্বের সুবাধে তার কবিতাগুলো আমি পেয়েছি।
তার প্রকাশিত বইসমূহ হলো: আরব ও স্পেনিশ ভাষার বই: দ্য ডে ওয়ারস অ্যা স্যুট স্ট্যাইন্ড রেডশী-১৯৯৬, ফার্মিং অব লাফটার-১৯৯৮, শীত ছাড়া কিছু না-২০০০, মৃত মাছেরা- ২০০২ ইত্যাদি।

Poet Abdul Hadi Sadoum


নিস্তেজ মাছেরা

ঝর্ণাটিতে নিস্তেজ মাছেরা জড়ো হয়
প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় পরস্পর থেকে উষ্ণতা পাবার আশায়।
তারা সম্ভবত বিস্মিত ও হতবাক হয়
যখন আমি হেঁটে যাই ঝর্ণাটির পাশ দিয়ে
নতুন স্যুটকোট আর কাপড়ের তৈরি আমার ত্বক দেখে
তারা কী ভাবে কে জানে?
বাতাসের পাখির ডানা ঝাঁপটানোয়
কুঞ্চিত কাতর হয় আমার পোশাক।

প্রতিদিন বাসে আমি তাদের
দেখতে দেখতে যাই
একটি লোক সর্বদা ঝর্ণাটির দিকে ঝুঁকে থাকে
তার কাজ পাথরগুলো পলিশ করা

আমার ভাবনা হয়, নিস্তেজ মাছেরাও
কী ভাবে, নিজেদের অস্তিত্ব নিয়ে?
Poet Abdul Hadi Sadoum
কিন্তু তারা তো সাঁতারই কাটতে জানে না।

এই মুহূর্তটি

এই মুহূর্তটি
এবং তার ছায়া
রূপ নিয়েছে আমার।

এটি লালরঙের
আমি ডুবেছি তার লালীমায়
এই মুহূর্তেই;

রূপকালঙ্কারে আঘাত করছে
এর বিস্মৃতি
দেয়ালগুলোর বিপরীতে,
অতৃপ্তিই
পছন্দ তাদের
যেমন পছন্দ তলদেশ, অশেষ।

এই মুহূর্তটি ক্ষণমধ্যেই
হারিয়ে গেলÑঅতল গহŸরে
যেতে যেতে বিরবির করল
কুকুরের পরিচারকদের দম্ভও
ক্ষণস্থায়ী খুব,
চিৎকার, চ্যাঁচামেচি, অবশেষে
ভাঙাচূরা একটি ডিস্কের মত
দোষণ ছড়ায় শব্দে।

শুনতে পাই
মুহূর্তটির বিদায়ী পদশব্দ
এটি আসে, যায়
আর আমি থাকি
অপেক্ষায়।

মেঘেদের ভিড়ে

মেঘেদের ভিড়ে
যখন আমায় আবিষ্কার করলে তুমি
আমার দেখভালে ছিল
আমারই নিরবতা
আর মৃত্যু নির্জনতা;

আমার আত্মার প্রদর্শনীতে
ওরা ডাকছিল আমায়
নাম না ধরে
কারণ, আমি যে পারি না
সাড়া দিতে

পদক্ষেপ

বিবর্ণ আয়নায়
আমার পদক্ষেপগুলো তরল হয়
এরপর গড়িয়ে যায় অতল গহŸর সন্ধানে
যা রয়েছে নির্দোষ-নিখাদ
এখনো..

শূন্যগর্ভ

তোমার কল্পনা
শীর্ষ থেকে হুড়মুড়িয়ে
ভেঙে পড়ছে
আমার দেয়ালে ওপর
অন্যেরা যখন
অবিরাম ঘুরছে
ফাঁকা একটি বৃত্তের চারপাশে।

বিবর্ণ আয়নায়

বিবর্ণ আয়নায়
প্রতিটি পদক্ষেপ দিই
তরলের সঙ্গে মিলেমিশে
একাকার হয়ে
অনুসন্ধান করতে বের হই
অতল গহŸরের
এখানো চাই
দোষণমুক্ত হোক
জীবন।

তাইগ্রিসের কাছে

আমার আগমনকালে
এখানে, যেখানে আমি তাকে ছেড়ে গিয়েছিলাম
তাইগ্রিসের কাছে,
আমার মা জিজ্ঞেস করলেন:
-পুত্র, এত দূরে গিয়ে, কী করবে তুমি?
তুমি যা বলবে, লোকেরা কি তা বুঝবে?
তোমার ভাষা কি তারা জানে?
আমাদের মুখ,
আমাদের বেদনা?
তারা কি জানে, তুমি কে?
আমরা কি কেউ হই তাদের?
দূরবর্তীতা জনিত
কত না পার্থক্য
ভিন্ন তীরবর্তী ভূমির।
-আমার সম্পর্কে তাদের বলো
এই ঘরের বারান্দা
বাড়ির উঠোন,
তোমার ফেরার পথ চেয়ে
চিরদিন যারা অপেক্ষা করবে।
শেহরাজাদের বিস্ময়কর গল্পটিও
তাদের বলো। সেও তো ছিল
বাগদাদেরই মেয়ে।
-বাগদাদের দুর্বৃত্ত আর চোরদের গল্প
তাদের ধ্বংস
এবং পুনর্জন্ম সম্পর্কে
অথবা একেবারে চুপ থেকো
কথা ভুলে যাওয়ার মত
যদি পূনর্জন্মে কিংবা অনস্তিত্বে
বিশ্বাস না থাকে?

সেই কাফেলার কথা বলো
মৃতদেহ বহনকারীদের কাফেলা

-পুত্র, তুৃমি কি তোমার মাথা
লুকিয়ে ফেলবে ভূমিতে
অস্ট্রিচ পাখির মত
এত অশ্রæ লুকাতে না পেরে?

-এরপর সেই কাফেলা সম্পর্কে বলো
সাদ্দাম যাদের কবর দিয়েছিল
বালিতে
যেখানে মরেছে তোমার ভাই
ওখানেই সমাধিস্থ সে
চিরদিনের জন্য,
শুকনো পাতার বিছানায়।

তোমার পিতা সম্পর্কে বলো
তোমার চাচা,
আর আমাদের গরীব প্রতিবেশী সম্পর্কে
তার পুত্র সম্পর্কেও
বুশের ট্যাঁঙ্ক বহর
কীভাবে বাগদাদকে মাটির সঙ্গে মিশিয়েছে,
যদিও সবকিছুসহ
শহরবাসী শান্তিই প্রত্যাশার করেছিল।

-মা, আমার মাথা লুকোনোই আছে
কারণ তাদের আঙুল তোলা
আমার দিকে।
আমাকে উড়ার অনুমতি দিন
যুদ্ধ সম্পর্কে জানতে চাই না
কোনো আগ্রহও নেই
যেখানে নিজেদেরই গিলে খাচ্ছে তারা
অন্তহীন অতীত থেকে।
-না,
আমাদের যাত্রা সম্পর্কে
আপনাকেও বলব না, মা।
আমি শুধু সামনের দিকে তাকাব
গ্রীষ্মে
এবং এই পথ
তারা আমার বেদনা দেখতে পাবে।

গাজী সাইফুল ইসলাম কবি, প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক
Gazi Saiful Islam poet & translator