শনিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১

Feyyaz Kayacan Fergar's Poems In Bengali Translation

ফেয়াজ কায়াকান ফের্জার: তার্কির কবি, লেখক ও অনুবাদক
ফেয়াজ কায়াকান ফের্জার( Feyyaz Kayacan Fergar) তার্কি কবি, লেখক ও অনুবাদক। কিন' সারাজীবন ফ্রান্স প্রবাসে কাটিয়েছেন। ফ্রেন্স ভাষায় তার কবিতা ইংল্যান্ডে প্রকাশিত হলে তিনি ১৯৮০ সালে ব্রিটিশ পরাবাস্তববাদী গ্রুফে যোগ দেন। তার্কিশ, ব্রিটিশ ও ফ্রেন্স ভাষায় সমান দক্ষ এই অনুবাদক তিনটি ভাষাকেই সমানভাবে সমৃদ্ধ করেছেন তাঁর অনুবাদ দ্বারা। এ জন্য তাঁকে ট্রিলিঙ্গুয়াল লেখক বলা হত। ‘মিসেস ভ্যালিস ওয়ার: দ্য শেলটার স্টোরিজ অব ফেয়াজ কায়াকান ফের্জার’, ’দ্য ব্রাইট ইজ ডার্ক ইনাফ’ অ্যা টেল ফর শ্রোডস তার্কিতে ফেয়াজের লেখা খুবই উল্লেখযোগ্যবই, পাওয়া যায় অ্যামাজন.কম-এ। তাঁর অনূদিত সাহিত্য কর্মের অন্যতম কাজ হলো, অকতাই রিফাতের ‘সিলেক্টেট পোয়েমস’, পোয়েমস অব ক্যান ইউসিল ইত্যাদি। উল্লেখ্য যে, তাঁর স্ত্রী জোলা তার্কির খুবই নন্দিত চিত্র শিল্পী। সৃজনশীল ও অনুবাদ কর্মে তার উদ্যম উৎসাহ জাগানিয়া। সমপ্রতি এই কবি ইন্তেকাল করেছেন। সম্পাদনা করেছেন: মডার্ন তার্কিশ প্রোয়েট্টি। ভালোবাসি একজন পথিকের মত কখনো আমি তোমায় ভালোবাসিনি কখনো আমি তোমায় ভালোবাসিনি। ভালোবেসিছিলাম, যখন দু’জন গান গেয়েছিলাম ক্লান্তরাতের তীরে। ভালোবেসেছিলাম, যখন তুমি হাসতে ফুলের সঙ্গে, ভালোবেসেছিলাম, যখন তোমার চোখ ছিল ফুটন্ত গোলাপের মতো। আর ভালোবেসেছিলাম নক্ষত্রদের। সেপ্টেম্বরের রাতে তারা চলতে চলতে থেমে যেত তোমার চোখের পাতায়। কখনো আমি তোমায় ভালোবাসিনি। ভালোবেসেছিলাম, তোমার বিদায়বেলা যখন তুমি রাস্তায় ছেড়ে গিয়েছিলে একাকী আমায়। ভালোবেসেছিলাম বুলেটগুলোকে ভালোবেসেছিলাম কান্নাকে, কান্না আমার প্রিয় হয়ে গেছে যখন থেকে তুমি ভুলে গেছে। যখন আমি বুঝতে পারলাম যে, আমি একা, ভালোবাসতে শিখলাম নিজের পায়ের সোজা দাঁড়িয়ে থাকাকে। ভালোবেসেছি নিঃশেষিত অবস'ায় যখন স্মরণ করেছি তোমাকে। ভালোবাসি তোমাকে ছাড়াই এই অস্তিত্বমান থাকাকে আর ভালোবাসি রুটি। তোমার কণ্ঠস্বরকে জুলাইয়ের সূর্যের মতো ভালোবেসে আমি হারিয়েছি পানি ভোরের এক পশলা বৃষ্টি। আমি ভালোবেসেছি তোমায় রাতে প্রবাহমান বাতাসের মতো। কখনো আমি তোমায় ভালোবাসিনি। আমি ভালোবেসেছিলাম তোমার গান যা তুমি গাইতে পাখিদের উদ্দেশ্যে। এপ্রিলের নীল লতাগুল্মকে বাদ দিয়ে আমি মজেছিলাম তোমার কথায় যদিও জানা ছিল বসন্তের আরেক নাম নিঃসঙ্গতা। এবং এভাবে অপার্থীব শীতলতার অনুভূতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত হতাম আমি। ছেলেরা বলগাম বিক্রি করে নতুন গান মুক্তি পায়। আমি ভালোবেসেছিলাম, তোমার বিজয় বার বার তোমার কাছে পরাজিত হয়ে। আমি আগুনে নিক্ষিপ্ত হয়েছিলাম সাগরে যেমন পুজারিরা নিক্ষেপ করে গোলাপ। আগুন আমি ভালোবাসলাম, যখন জ্বলছিলাম আগুনেরই মতো। কখনো আমি তোমায় ভালোবাসিনি। আমি ভালোবাসলাম আগুন কিন' কখনোই তোমাকে না। আমি ভালোবাসলাম আগুন কিন' কখনোই তোমাকে না। যখন আমি কাউকে ভালোবাসি ভালোবাসি একজন পথিকের মতো...! এক রাতে একটি হরিণ পর্বত থেকে নেমে এলো তোমার হৃদয়ে। এরপর আরেক রাতে সেটি একটি কবিতা হয়ে আলো জ্বালল সেখানে। প্রতিটি মানুষের নিঃসঙ্গতা তার একাকীত্বের কষ্টের খুব গহীন থেকে ভোরের কুয়াশা থেকে নিষ্ঠুর দুঃখবোধ থেকে তোমার কান্না জড়ানো মুখ থেকে মানব অস্তিত্ব-তার প্রার্থনার ভাষা খুঁজে পায়। ডালিম, ডুমুর, জলপাই আর আমার হৃৎপি গোলাপ সম্মুখে এবং যে আশায় আমি বাধি বুক সবই অপ্রতুল, তোমা বিহনে। তুমি রয়েছ সামনে সবসময়, তুমি রয়েছ সামনে সবসময়, কখনো আমি তোমায় ভালোবাসিনি। তোমায় ভালোবেসেছিলাম, যখন তুমি চলে গিয়েছিল পৃথিবীকে ভালোবেসেছিলাম, যখন তুমি ফিরে এসেছিল। কিন' যখন ছিলে-ভালোবাসিনি- ভয়ে ছিলাম যদি তোমাতে আসক্ত হয়ে পড়ি! যাহোক, খুব হাসতাম যখন ট্রেনের জানালায় আমার দোলায়মান রুমাল দেখে তুমি ছুটে আসতে আর তুলে নিতাম তোমাকে। প্রথম তুষারপাতে যখন ঢাকা পড়ত উপত্যকা ঢাকা পড়ত তোমার মুখ যেন বা কবর হতো তোমার আর ওটাই ছিল ভীষণ সুন্দর। নিজের ভেতরে আমি হত্যা করেছিলাম তোমায়। কখনো আমি তোমায় ভালোবাসিনি। ভালোবেসিছিলাম, যখন দু’জন গান গেয়েছিলাম ক্লান্তরাতের তীরে। ভালোবেসেছিলাম, যখন তুমি হাসতে ফুলের সঙ্গে, ভালোবেসেছিলাম, যখন তোমার চোখ ছিল ফুটন্ত গোলাপের মতো। আর ভালোবেসেছিলাম নক্ষত্রদের। আমি ভালোবাসলাম আগুন কিন' কখনোই তোমাকে না। আমি ভালোবাসলাম আগুন কিন' কখনোই তোমাকে না। যখন আমি কাউকে ভালোবাসি ভালোবাসি একজন পথিকের মতো...! [দেশ প্রেমের অসাধারণ এই কবিতাটির সঙ্গে কবি পাবলো নেরুদার একটি কবিতার বেশ মিল দেখা যায়। অনুবাদক কবি নিজেই]

Amir Aziz’s Poem ''Sab Yaad Rakha Jayega''

‘‘সবকিছু মনে রাখা হবে’’ ভারতীয় তরুণ কবি আমির আজিজের ভাইরাল হওয়া কবিতা গাজী সাইফুল ইসলাম আমির আজিজ (অসরৎ অুরু) তরুণ কবি জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ার ছাত্র। তার কিছু কবিতা গত বছরের প্রথমার্ধ থেকে বেশ আলোচিত। বিশেষ করে তার ‘ঝধন ণধধফ জধশযধ ঔধুবমধ' কবিতাটি। বব ডিলান ও জনি ক্যাশের অনুকরণে গত বছর কবিতাটির একটি আবৃত্তি ভিডিও প্রকাশ করেছিলেন কবি আমির আজিজ নিজে। মার্চ ২০১৯ পর্যন্ত সেই ভিডিওটি ২,৫০,০০০ দর্শক পায়।
‘উইকিলিকস’এর প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসেঞ্জ বর্তমানে ইংল্যান্ডের একটি কারাগারে বন্দী। সেখানে একদিকে আমেরিকার চাপে রাষ্ট্রীয়ভাবে তার বিচারের আয়োজন চলছে অন্যদিকে শত শত মানুষ, বিশেষ করে, কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, দার্শনিক, গায়ক, মানবতাবাদীরা তার মুক্তির জন্য রাস্তায় নামছে। তার মুক্তির দাবীতে শত শত প্রতিবাদকারী লন্ডনে সমবেত হচ্ছে। এমনই একটি জমায়েতে গত ২২ ফেব্রূয়ারি ২০২০,‘পিঙ্ক প্লয়েড’ ব্যান্ডের গিটারিস্ট, রক আইকন, জর্জ রজার ওয়াটারস আমির আজিজের কবিতাটির ইংরেজি ভার্ষন আবৃত্তি করেন। এর আগে তিনি বলেন: আমরা এখানে সমবেত হয়েছি একটি বৈশ্বিক আন্দোলনে, এই ভঙ্গুর বিশ্বের জন্য খুবই দরকারী একটি আন্দোলনের ওপর আলোকপাত করার জন্য। তিনি আমির আজিজের পরিচয় দিতে গিয়ে বলেন: দিল্লীর একজন তরুণ কবি, আন্দোলনকারী, যিনি লড়ছেন মোদী আর তার ফ্যাসিবাদী বৈষম্যমূলক নাগরীকত্ব আইনের বিরুদ্ধে। ‘পিঙ্ক প্লয়েড’ ইংলিশ ব্যান্ড কবিতাটির সঙ্গে নিচের ক’টি বাক্য যুক্ত করে:‘‘তুমি পৃথিবীতে অবিচার রচনা করছ/ আমরা বিপ্লব রচনা করব আকাশে। সবকিছু মনে রাখা হবে। সবকিছু রেকর্ড হচ্ছে।’’ এ যেন ফিলিস্তিনি কবি মাহমুদ দারবীশের ‘আইডেন্টি কার্ড’ কবিতার প্রতিধ্বনি। ‘পিঙ্ক প্লয়েড’এর ওই আবৃত্তি ভিডিওটিও সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বজুড়ে ভাইরাল হয়ে যায়। সবকিছু মনে রাখা হবে মূল (উর্দু)-আমির আজিজ ইংরেজি অনুবাদ: পিঙ্কপ্লয়েড তুমি রাত রচনা কর, আমি রচনা করি চাঁদ। যদি তুমি আমায় জেলে পুরে দাও, তবে আমি প্রাচীর ডিঙিয়ে লিখতে থাকব। যদি তুমি আমার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করো, তবে আমি লিখতে বসব যে সব অবিচার থেকে দুর্ভোগ আমাদের। যদি তুমি আমায় খুন করো, তবে আমি প্রেতাত্মা হয়ে ফিরব এবং লিখতে থাকব। এবং তুমিই যে খুন করেছ সেই প্রমাণাদি হাজির করব। যদি তুমি বিচারের নামে কোর্ট বসিয়ে তামাশা কর; তবে ন্যায় বিচার পাবার জন্য আমরা দেয়াল ও রাস্তাগুলোও ‘কালি’ করব যথেষ্ট উচ্চ স্বরে আমাদের দাবী ঘোষণা করব যাতে শ্রবণ প্রতিবন্ধীরাও শুনতে পায়। যথেষ্ট পরিষ্কার হস্তাক্ষরে লিখব যাতে অন্ধরাও সে সব পড়তে পারে। যদি তুমি কালো পদ্ম লিখ তবে আমি লাল গোলাপ লিখব। যদি তুমি এ ধরায় আমাদের নিপীড়ক হও, তবে পরকালে তুমিও নিপীড়িত হবে। সব মনে রাখা হবে। সবকিছুই মনে রাখা হবে। সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু হয়েও তুমিই আমায় খুন করেছ লাঠি আর গুলি চালিয়ে; সে সব স্মৃতি আমাদের ভাঙা বুক তুলে রাখবে। সব মনে রাখা হবে। সবকিছু মনে রাখা হবে। আমরা সকল মিথ্যাচারের ‘কালি’ করব, এটা আমরা ভালো জানি। হয়তো আমাদের রক্ত দিয়েই এ স্পষ্ট সত্যটি লিখব এবং কোনোদিন তা প্রকাশও করব। প্রকাশ্য দিবালোকে তোমরা টেলিফোন, ইন্টারনেটসহ সকল যোগাযোগ মাধ্যমে জনগণের প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করছ এবং এরপর পুরো শহরটিকে শীতল রাতের এক বন্দীশালা পরিণত করেছ; হঠাৎ আমার বাড়ি-ঘরে অনধিকার প্রবেশ করেছ, ধ্বংস করেছ আমার ছোট্ট জীবন আমার প্রিয়তম সন্তানকে রাস্তার মাঝে হত্যা করেছ এবং এরপর যা কিছু ঘটেছে সে সম্পর্কে কোনো মনোপীড়ন ছাড়াই জনসমক্ষে তুমি হাসছ; সব মনে রাখা হবে। সবকিছু মনে রাখা হবে। দিনের বেলা তুমি মিষ্টি কথা বলো; এবং এরপর জনতাকে আশ্বাস দাও যে, সবকিছু ঠিকঠাক আর নিয়ন্ত্রণে আছে স্বব্ধ করে দিয়ে সকল সোচ্চার কণ্ঠ। রাতের বেলা নিপীড়ন আর আক্রমণ করো লোকদের-যারা দাবী তোলে অধিকারের। তোমরাই আক্রমণ করে আক্রমণকারীর দোষ চাপাও আমাদের ওপর। এসবই মনে রাখা হবে। আমি আমার হাড়ের ওপর এইসব নির্মমতার ঘটনা খোদাই করব। তুমি আমার জন্ম-পরিচয়ের দলিলাদি চাইছ। জেনে রাখ, নিশ্চয়ই আমি আমার অস্তিত্বসংক্রান্ত সকল প্রমাণাদি দাখিল করব। এই যুদ্ধে তোমাকে শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত লড়তে হবে এবং এর সবই মনে রাখা হবে চিরদিনের মত। তুমি যেভাবে দেশের মানুষকে বিভক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছেন-এটাও মনে রাখা হবে আর জনতাকে ঐক্যবদ্ধ করার আমাদের যে উদ্যোগ আর প্রচেষ্টা তাও মনে রাখা হবে। এবং যখন আলোচনা হবে ‘কাপুরুষোচিত’ কর্ম সম্পর্কে, তোমার কর্ম উদাহরণ হিসেবে সামনে আসবে। এবং যখন আলোচনা হবে জীবনের চলার পথ সম্পর্কে, আমাদের নামগুলো সামনে আসবে। অবশ্যই তখন আলোচিত হবে কিছু লোক যে দৃঢ় মনোভাবাপন্ন ছিল। যে সব লোক নীতি-আদর্শে অটল তাদের নীতিচ্যুৎ করার জন্য, দরকার হলে, তোমরা হাতুড়ি চালাও কিছু লোক বশ্যতা মানে না, বিক্রি হয় না, যেমন তোমরা হও। কিছু লোক অসম্ভব পরিসি'তিতেও দাঁড়িয়ে থাকে কিছু লোক তাদের মৃত্যু সংবাদ শুনেও জীবিত থাকে। চোখ তার পলক ফেলতে ভুল করতে পারে; জগৎ তার সঠিক অবস'ানে ঘুরতে ভুল করতে পারে; কিন' আমাদের স্বাধীনতা ছিনিয়ে নেওয়ার তোমার প্রচেষ্টা সফল; দুরাত্মার প্রতিধ্বনি সর্বদা মনে রাখা হবে। সুতরাং তোমার নাম নিয়ে লোকেরা চিরদিন তোমাকে অভিশাপ দিতে থাকবে; তোমার মৃতদেহের প্রতি অসম্মান করবে ঘৃণার কালো কালি ছুঁড়ে। তোমার নাম, দেহাবয়বের উপসি'তি কোনোদিন কেউ ভুলবে না। এর সব কিছুই চিরকাল মনে রাখা হবে। (কবিতার অনুবাদ-গাজী সাইফুল ইসলাম)