মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০১৯

Sanaz Davoodzadeh Far's Poems in Bengali Translation


সানাজ দাভুদজাদে ফার: লাক্সিমবুগ প্রবাসী ইরানের তরুণ কবি

সানাজ দাভুদজাদে ফার (Sanaz Davoodzadeh Far) লাক্সিমবুগ প্রবাসী ইরানিয়ান কবি। লাক্সিমবুর্গে হলো বেলজিয়াম, ফ্রান্স ও জার্মানি পরিবেষ্ঠিত ইউরোপের ছোট্ট একটি দেশ। ফার সেখানে একজন ফ্রিল্যান্স পেইনটার। ফার শিল্পের পথ পা রাখেন থিয়েটার ও সঙ্গীত দিয়ে। বিশেষ করে ইরানিয়ান ক্ল্যালিসিক্যাল সঙ্গীত। পারি মালকি ও মোস্তবা আসগরির মত বিখ্যাত সঙ্গীত শিল্পীদের কাছে তালিম নিয়েছেন তিনি। অভিনয় করেছেন বহু নাটকে এবং পুরষ্কার জিতেছেন। এরপর শুরু করেন গল্প ও কবিতা লেখা। ক্লাসিক্যাল ধারায় রচিত তার কবিতা সে দেশের বহু গুরুত্বপূর্ণ পত্রিকা-সাময়িকিতে ছাপা হয়েছে, হচ্ছে। তার কবিতা ইংরেজি, আরবি, ফরাসি, স্পেনিশ, জার্মান, কুর্দিশ ও মরক্কোন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। তার প্রথম বই আই ওয়াক অন দ্য ডেড লেটারস আরবি ভাষায় অনূদিত হয়েছে এবং সিরিয়ার তামোজ পাবলিশিং সেটি প্রকাশ করেছে। ফরুঘ ফারুকজাদের পদাঙ্ক অনুসারী সানাজ দাভুদজাদে একজন ফেসবুক অ্যাক্টিভিস্টও। বহু দেশ যেমন কায়রো, ওমান, ইরাক, তিউনিয়শিয়া, রোমানিয়া, তার্কি  প্রভৃতি দেশের সাহিত্য সম্মেলনে তিনি অংশ গ্রহণ করেছেন। প্রবাসে থেকেও বিভিন্ন সময় ইরান সরকারের গণনিপীড়নমূলক বিভিন্ন পদক্ষেপের বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টির চেষ্টা চালিয়েছেন তিনি।

Sanaz Davoodzadeh Far Poet, Painter & Activist

সানাজ দাভুদজাদে ফারের কবিতা

আমি হাঁটি, মৃত শব্দদের ওপর দিয়ে
এক.
আমাদের চার চোখের যখন মিলন ঘটেছিল
মাঝখানে ছিল ক’টি সিগারেটের ধোঁয়ার দেয়াল
আর আমাদের দেখা হওয়ার আগে
এককাপ গরম চায়ে ছিল একটুকরো চিনি আলোড়ন।
এ অভিজ্ঞতাই সারাজীবনের পাথের আমাদের।
দুই.
আমি যখন ভালোবাসতে শুরু করলাম
তোমার ভালোবাসা তখন শেষ
এরপর, বছর ধরে শুধু দৌড়ে গেছি আমি।
তিন.
তুমি যদি খুলে দাও তোমার সীমান্ত
ভিসাটিসা ছাড়াই
তোমার মাঝে হবো স্থানান্তরিত আমি 
আমার মামলা রাজনৈতিক নয়
আমি পালিয়েছি একজন প্রেমিকা হিসেবে
এখন যদি ঘরে ফিরি
ওরা সেলাই করে দেবে আমার জিহŸা ও ঠোঁট
সীমানার বাইরে ভালোবাসা
ঘর ছাড়া, কথাবার্তা ছাড়া।
চার.
তোমার কথার বাষ্প
ভুল করে ঘিরে রেখেছে আমার কল্পনা
তাকাও আমাদের ভাগাভাগির স্বপ্নের দিকে
তাদের অবস্থান খুবই নিকটে, নূন্যতম দূরত্বে
অথচ তোমার হাত গুটিয়ে নিয়েছ আমার থেকে, বহুদিন আগেই।
পাঁচ.
জন্মের সময় আমি কেঁদেছি
বেঁচে থাকার সময় চিৎকার করেছি
পৃথিবী ছেড়ে যাওয়ার সময়
মুখে থাকে যেন মোনা লিসা হাসি।
ছয়.
আমি যখন ভালোবাসার সুগন্ধির ঘ্রাণ নিই
কোনো কারখানার ভক্তই পারে না আমার সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে
পাপড়ির মত টুকরো টুকরো করে ছিঁড়ে ফেলো আমায়
এরপর পাঠিয়ে দাও প্যারিসে
এরপর একটি নাম দাও ‘জুলিয়েট’
তখন দেখবে আমিই হব সর্বাধিক বিক্রি হওয়া সুগন্ধি।
সাত.
একটি ভূমিকম্প যখন ধ্বসে দেয় কোনো জনপদ
আমার হৃৎপিণ্ডে ধ্বস নামে
পৃথিবী বরাবর আমার হৃৎপিণ্ডে হলো একটি দোলনা
এবং এর ভূকম্প এর সুরেলা এক সঙ্গীত আমার বেদনায়।
ওহ পৃথিবী, তুমি সুখে গাও তোমার ভুলের সঙ্গীত।
সমস্ত বিকল্প রয়েছে টেবিলটির ওপর
আঁকতে পারো একটি সকালচিত্র তোমার কথায়
দেখাতে পারো তোমার অনুপস্থিতি পাশপাশি
হাত আর ঠোঁটের জন্য একইরকম একটি বাক্যাংশ পেতে
চুপচাপ নিরবতাকে ভরতে পারো একটি কাঁচপাত্রে
আর তখন আমি পান করে নেব ছায়া।
আট.
আমি যখন বিছনায় শুয়ে ছিলাম
সেবিকা এসেছিল
কুয়াশাও এসেছিল তখনই
চারপাশে তখন শুধু পানি পড়ার শব্দ।
সেবিকা চলে গেল,
আমি রয়ে গেলাম জায়গারটির উত্তরে 
ভেতরের সবকিছু তখন চক্চকে ঝক্মকে
ভেজা গন্ধ ভাসছে বাতাসে।
নয়.
আমি একটি গুলিভরা পিস্তল
আমি যদি চোখের পলক ফেলি, গুলিগুলো তোমাকে হত্যা করবে।
যদি আমি তাদের বন্ধ না করি,
আমার সকল উপাদান আমার কাঁধে একটি পিঠব্যাগের রূপ নেবে
এবং যা ভরে উঠবে গান পাউডারে,
আমি তখন পরিণত হবো একটি বোমায়।
যদি আমি নিজেকে বিস্ফোরিত না করি, ফেটে যাব আপনিই।
এতে মনে হতে পারে যে, দুজনেই আমরা যুদ্ধ করছি মরার জন্য।
আমি হাঁটি
বুলেটগুলো ফুটে আমার চারপাশে ফুস্ফাস, ঠুসঠাস শব্দে।

অঙ্কন
গণিতে তার অসম্পূর্ণ উপস্থিতি
ঠোঁট ছাড়া মুখের মত
তার কালো চোখেরা কাঁদছে আমার তুলিতে
আমার চুলগুলো উড়ে গিয়ে পড়ে
তার মুখের ওপর
বাতাসের ধাক্কায় যেমনটি ঘটে সাধারণত
এরপর দৃশ্যপট থেকে উধাও হয় তার চেহারাখানি
তবু ছবিটি বিক্রি হয় ভালো।
তোমাকে উপস্থিতি ছাড়া
তোমার উপস্থিতি ছাড়া
আমি জমাটবাধা এক খণ্ড ঠাণ্ডা সিমেন্ট
শেওলা ছাড়াই শেওলাধরা
কর্তিত একটি গাছের সবুজ গুড়ি
কিন্তু এটি একটি অশুভ লক্ষণ যে,
তোমাকে ছাড়া
আমি হতে পারি না কোনো কিছু,
এমনকি
ফোটাতে পারি না একটি গোলাপও...
ফড়িং
তুমি যেমন উদ্ধৃতিযোগ্য, একটি ফড়িং
আমার বুকের বর্ণগুলোর ওপর বস, রঙ ছড়াও
এরপর উড়ে যাও অন্যত্র।
বর্ণগুলোর ওপর তোমার হাত রাখলেই
তা থেকেই ওরা গর্ভবতী হয়
ভাষাটি বংশ বৃদ্ধি করে
এবং নতুন সব বর্ণে লিখা হয় নতুন চিঠি
আর সে সব আমি পড়ি গভীর মনোনিবেশে।

মধ্যপ্রাচ্যের মায়েদের সঙ্গে

যুদ্ধে কেড়ে নিয়েছে তার ছোট্ট মেয়েটিকে
তার দু’চোখের সামনে থেকে
তার হৃদয়ের বিশাল ঔজ্জ্বল্যের মাঝখান থেকে
চুরি করেছে রঙধণু রঙের ওড়নাটি
যখন মেয়েটি তার পুতুলটিকে কোলে নিয়ে
ঘুরে বেড়াচ্ছিল বাইসাইকেলে।
একটি গোলকার বস্তু তাকে থামিয়ে দিয়েছে
বিদ্ধ হয়ে তার গলদেশে চুরি করেছে তার হাসি।
ওহ্ আম্মু...
গভীর দুঃখে পতিত হলো সে,
তাকে বাঁচনোর চেষ্টা ছাড়াই
তার প্রাণহীন দেহের চারপাশে উড়তে লাগলো
রাজ্যের ধূলি।

Gazi Saiful Islam, Poet & Translator



0টি মন্তব্য:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এতে সদস্যতা মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন [Atom]

<< হোম